কুমিল্লা শহরের প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বাংলাদেশের পূর্ব সীমায় বিচ্ছিন্ন
অনুচ্চ পার্বত্য এলাকা, যা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে এক পরিচিত নাম। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক
খননকাযের ফলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনাদি উন্মোচিত হয়েছে। ঈষৎ লাল পুরাতন পললভূমির
ইঙ্গিতবহ অঞ্চলটি প্রাচীন ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। মেঘনা বেসিনের ভাটিতে গোমতী
নদী তীরস্থ ময়নামতী গ্রাম থেকে লালমাই রেলস্টেশনের নিকটে চান্দিমুরা পযন্ত এই ক্ষুদ্র
শৈলশ্রেণি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৭ কিলোমিটার পযন্ত। এর প্রশস্ততম অংশটি ৪.৫ কিলোমিটার
চওড়া এবং সর্ব্বোচ্চ চূড়াটি ৪৫ মিটার উঁচু। ১৮৭৫ সালে পাহাড়গুলির মধ্য দিয়ে প্রসারিত
পুরানো সড়কটির পুনঃনির্মাণ কালে শ্রমিকরা হঠাৎ কিছু ধ্ধংসাবশেষ উদঘাটন করে। তখন এটিকে
একটি ছোট ইটের দুর্গ মনে করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল একটি বৌদ্ধ মঠ। এর প্রায়
৭২ বছর আগে ১৮০৩ সালে এই এলাকা থেকেই ময়নামতীর প্রথম পুরানিদর্শন ১২২০ খ্রিস্টাব্দে
উৎকীর্ণ হরিকলদেব এর তাম্রশাসন আবিস্কৃত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ময়নামতীর
ধ্ধংসাবশেষসমূহ পুনরাবিষ্কৃত হয়। একটি জরিপের পর সরকার ১৮টি স্থানকে চিহ্নিত করে এবং
সেগুলো সংরক্ষণ করে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে আরও নিয়মিত ও নিয়মানুগ জরিপের ফলে
সমগ্র অঞ্চলের জনবসতিহীন এলাকা থেকে পঞ্চাশেরও অধিক স্থান চিহ্নিত করা হয়। এগুলির অধিকাংশই
শৈলশ্রেণির উত্তরাংশে, যা এখন ক্যান্টনমেন্ট এলাকার অন্তর্গত। ১৯৫৫ সালের জানুয়ারি
মাসে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন আরম্ভ হয়। খনন পযায়ে চিহ্নিত পঞ্চাশোধ্ধ স্থানের মধ্যে এ
যাবৎ নয়টি উন্মোচিত হয়েছে।
এক নজরে ময়নামতি
অবস্থিতঃ কুমিল্লা
আবিস্কারঃ ১৮৭৫ সাল
খনন শুরুঃ জানুয়ারি ১৯৫৫
যে সভ্যতার নিদর্শনঃ বৌদ্ধ সভ্যতার
অন্য নামঃ হিলটিয়া ও লালমাই
যার নামানুসারে নামকরণঃ রাণী ময়নামতি
রাজধানী ছিলঃ মধ্যযুগে বৌদ্ধ শাসনামলে
Post a Comment